কল্পনা করুন মরুভূমির সূর্যের নীচে সবুজে ভরা শস্যক্ষেত্র। विरोधाभाস মনে হচ্ছে, তাই না? তবুও, দুবাইতে এই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর (UAE) মতো শুষ্ক অঞ্চলে, যেখানে বৃষ্টিপাত খুবই কম এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি জলের অভাব, সেখানে চাষাবাদ একগুচ্ছ বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে । মূল সমস্যাটি স্পষ্ট: চরম জল সংকট কৃষিক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় বাধা । এটা শুধু পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয় নয়; এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। ঐতিহাসিকভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী তার খাদ্যের ৯০% এরও বেশি আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল, যা এটিকে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাতের মুখে দুর্বল করে রেখেছিল । এই বিষয়টি উপলব্ধি করে, দুবাই একটি কৌশলগত পরিবর্তন আনছে, তার খাদ্য সুরক্ষা জোরদার করতে এবং একটি সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে টেকসই, জল-সাশ্রয়ী কৃষি পদ্ধতির পক্ষে সওয়াল করছে । বুদ্ধিদীপ্ত জলসেচ: ড্রিপ ও প্রিসিশন ইরিগেশন পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে
সত্যি বলতে, মরুভূমিতে প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিগুলো তেমন কার্যকর নয়। স্প্রে ইরিগেশনের মতো কৌশলগুলি শুষ্ক আবহাওয়ায় 엄청 অপচয়কারী, যেখানে জল গাছে পৌঁছানোর আগেই বাষ্পীভবনের কারণে ৬০% পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে । এখানেই বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানগুলির প্রয়োজন। ড্রিপ ইরিগেশন, যা দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং ব্যবহৃত হয়, তা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে । এই পদ্ধতিতে পাইপ এবং নির্গমকের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ধীরে ধীরে, সরাসরি গাছের মূলে জল পৌঁছে দেওয়া হয় । ফলস্বরূপ? বাষ্পীভবন বা জলের স্রোতে অপচয় ন্যূনতম হয়, যার ফলে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হয় – প্রায়শই স্প্রিংকলারের তুলনায় ২৫-৩৫% কম জল ব্যবহৃত হয় । কিছু খামার এমনকি সাবসারফেস ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করে, যেখানে বাষ্পীভবন আরও কমাতে পাইপগুলি মূলের কাছাকাছি পুঁতে দেওয়া হয় । এই পরিবর্তনে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি সহায়তায় প্রায়শই ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত থাকে । কিন্তু দুবাই সাধারণ ড্রিপ সিস্টেমের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রিসিশন এবং স্মার্ট ইরিগেশন প্রযুক্তিগুলি জল সংরক্ষণের জন্য একটি হাই-টেক পদ্ধতি ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা লাভ করছে । কল্পনা করুন সেন্সরগুলি মাটির আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা থেকে শুরু করে আর্দ্রতা পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে, সাথে রিয়েল-টাইম আবহাওয়ার ডেটা এবং এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যুক্ত হয়েছে । এর ফলে শস্যের যখন এবং যেখানে প্রয়োজন, ঠিক সেই পরিমাণ জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়, যা বৃদ্ধিকে সর্বোত্তম করে এবং অপচয়কে মারাত্মকভাবে হ্রাস করে । এটি গাছকে ঠিক ততটুকুই দেওয়া, যতটা তার প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশিও নয়, কমও নয়, যা সামগ্রিক জল ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায় । দুবাই মিউনিসিপ্যালিটির মতো সংস্থাগুলির দ্বারা ব্যবহৃত স্মার্ট মিটার এবং IoT সেন্সরগুলির মতো সরঞ্জামগুলি ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার নিরীক্ষণে সহায়তা করে, যা নিয়ন্ত্রণের আরও একটি স্তর যুক্ত করে । মাটিবিহীন চাষ: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জল সাশ্রয়
কী হবে যদি আপনি মাটি ছাড়াই, অনেক কম জল ব্যবহার করে চাষ করতে পারেন? নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ কৃষি (CEA) জগতে আপনাকে স্বাগত। হাইড্রোপনিক্স (পুষ্টিকর জলে গাছপালা জন্মানো) এবং অ্যারোপনিক্স (মূলকে পুষ্ট করার জন্য কুয়াশা ব্যবহার) এর মতো কৌশলগুলি দুবাইয়ের কৃষি ক্ষেত্রে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে । প্রায়শই হাই-টেক গ্রিনহাউস বা উল্লম্ব খামারে অবস্থিত, এই পদ্ধতিগুলি অবিশ্বাস্য জল সাশ্রয় করে – প্রচলিত মাটি-ভিত্তিক চাষের তুলনায় সম্ভাব্যভাবে ৯০% পর্যন্ত জল ব্যবহার হ্রাস করে । কীভাবে? বন্ধ বা আধা-বন্ধ সিস্টেমে সেচের উপর সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দিয়ে, বাষ্পীভবন জনিত ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে । জল-সংকটপূর্ণ অঞ্চলে কৃষিকে কার্যকর এবং টেকসই করার জন্য এটি একটি মূল কৌশল । বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা: গ্রে-ওয়াটার এবং TSE সেচ
যখন প্রাকৃতিক মিষ্টি জলের অভাব দেখা দেয়, তখন আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে। দুবাই বর্জ্য জলকে কৃষির জন্য একটি মূল্যবান সম্পদে পরিণত করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছে । সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বার্ষিকভাবে প্রচুর পরিমাণে পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য (sewage effluent) উৎপাদন করে, প্রায় ৭৩৫ মিলিয়ন ঘনমিটার । এটিকে নষ্ট হতে না দিয়ে, জেবেল আলি এবং আল আওয়িরের মতো প্রধান কেন্দ্রগুলিতে উন্নত শোধনাগারগুলি এই জলকে উচ্চ মানে শোধন করে । এই শোধিত পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য (TSE), যাকে প্রায়শই পুনর্ব্যবহৃত বা গ্রে-ওয়াটার বলা হয়, তা খামার, ল্যান্ডস্কেপিং এবং জনসাধারণের সবুজ স্থানগুলিকে সতেজ রাখতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । TSE ব্যবহার মূল্যবান মিষ্টি জলের সরবরাহের উপর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে । এর ব্যাপকতা সম্পর্কে ভাবুন: ২০০৮ সালে, শুধুমাত্র জেবেল আলি প্ল্যান্ট ১৩৭ মিলিয়ন ঘনমিটার পুনর্ব্যবহৃত জল উৎপাদন করেছিল, যার একটি বড় অংশ সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল । ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োসেলাইন এগ্রিকালচার (ICBA)-এর মতো গবেষণা সংস্থাগুলি TSE-এর ব্যবহার বাড়ানোর উপায়গুলি ক্রমাগত অন্বেষণ করছে, এমনকি ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলি রিচার্জ করার জন্য এর সম্ভাবনাও তদন্ত করছে । দুবাইয়ের জল ব্যবস্থাপনা কৌশল এই পুনর্ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়, শোধিত বর্জ্য জলের সম্পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে । সমুদ্রের জলকে চাষের উপযোগী করা: ডিস্যালিনেশনের ভূমিকা
একটি উপকূলীয় শহর হিসেবে যেখানে প্রাকৃতিক মিষ্টি জলের সরবরাহ খুবই সীমিত, ডিস্যালিনেশন – সমুদ্রের জল থেকে লবণ অপসারণ – দুবাইয়ের সামগ্রিক জল সরবরাহের জন্য অপরিহার্য, যা এর বেশিরভাগ পানীয় জলের যোগান দেয় । অপরিহার্য হলেও, ডিস্যালিনেটেড জল কৃষি সেচের চাহিদা পূরণেও সহায়তা করে, কিন্তু এখানে একটি সমস্যা রয়েছে: এটি অত্যন্ত শক্তি-নির্ভর । এই উচ্চ শক্তির চাহিদা খরচ এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে একটি টেকসইতার চ্যালেঞ্জ তৈরি করে । সমাধান? ডিস্যালিনেশনকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তোলা। ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টগুলিকে নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে এই অঞ্চলে উপলব্ধ প্রচুর সৌর শক্তি দিয়ে চালানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং গবেষণা চলছে । জেবেল আলি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টের মতো সুবিধাগুলি এই প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয় । তবে, চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সেচের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শোধিত পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যের ব্যবহার সর্বাধিক করে কৃষিক্ষেত্রে ডিস্যালিনেটেড জলের উপর নির্ভরতা কমানো । সরকারি সহায়তা: জল-সাশ্রয়ী কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া
জল-সাশ্রয়ী কৃষির দিকে এই রূপান্তর আপনাআপনি ঘটে না। দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এই পরিবর্তনগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি হল দৃঢ় সরকারি প্রতিশ্রুতি । নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে যে খরচ এবং ঝুঁকি জড়িত তা স্বীকার করে, বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা চালু রয়েছে । দুবাই মিউনিসিপ্যালিটির উদ্যোগে "Dubai Farms"-এর মতো কর্মসূচিগুলি স্থানীয় কৃষকদের সরাসরি সহায়তা প্রদান করে, যেমন বীজ এবং সারের মতো ভর্তুকিযুক্ত সরবরাহ, সেচ ব্যবস্থার মতো সরঞ্জামের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং এমনকি কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পরিষেবা । স্বল্প সুদে ঋণ এবং ভর্তুকির মতো বৃহত্তর প্রণোদনাগুলি খামারে দক্ষ সেচ, CEA এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করে । এই প্রচেষ্টাগুলি Food Security Strategy 2051 এবং UAE Green Agenda-র মতো জাতীয় লক্ষ্যগুলির সাথে কৌশলগতভাবে যুক্ত, যার লক্ষ্য টেকসই স্থানীয় উৎপাদন এবং সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা । অর্থায়নের মতোই জ্ঞানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি সংস্থা এবং ICBA-এর মতো গবেষণা কেন্দ্রগুলি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে । দুবাই মিউনিসিপ্যালিটি ফিল্ড ভিজিট এবং প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করে, অন্যদিকে ICBA চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের জন্য টেকসই কৌশলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে । সচেতনতামূলক প্রচারণা কৃষক এবং জনসাধারণ উভয়কেই জল সংরক্ষণ এবং স্থানীয় পণ্যের উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষিত করে । জলবায়ু-সহনশীল ফসল এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মতো ক্ষেত্রগুলিতে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে গবেষণা ও উন্নয়নেও সহায়তা প্রসারিত করা হয়, যা টেকসই কৃষি পদ্ধতির ক্রমাগত উন্নতি নিশ্চিত করে । স্মার্ট জল কৃষিতে দুবাইয়ের যাত্রা উদ্ভাবন, কৌশলগত সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নিবেদিত নীতি সহায়তার একটি শক্তিশালী মিশ্রণ প্রদর্শন করে । ড্রিপ ইরিগেশন, প্রিসিশন সিস্টেম, CEA-এর মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করে এবং TSE ও টেকসইভাবে চালিত ডিস্যালিনেশনের মতো অপ্রচলিত জলের উৎসগুলিকে কাজে লাগিয়ে, এই আমিরশাহী সরাসরি জল সংকটের মোকাবিলা করছে । এই বহুমুখী পদ্ধতি শুধু খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়; এটি স্থিতিস্থাপকতা তৈরি, খাদ্য সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী শুষ্ক পরিবেশের জন্য টেকসই সমাধানের পথপ্রদর্শক হওয়ার বিষয় । চ্যালেঞ্জগুলিকে সুযোগে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দুবাইকে একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা দেখায় যে শুষ্কতম জমিও কীভাবে টেকসইভাবে প্রস্ফুটিত হতে পারে ।