UAE-তে বসবাস করা বা ঘুরতে আসার মানে হলো বিভিন্ন সংস্কৃতি আর প্রেক্ষাপটের এক প্রাণবন্ত মিশ্রণের অভিজ্ঞতা লাভ করা। এই দেশ সহনশীলতা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর খুব জোর দেয়, আর এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন: বৈষম্য বিরোধী আইন (Anti-Discrimination Law) । শুরুতে এটি Federal Decree Law No. 2 of 2015 হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা পরে Law No. 34/2023 দ্বারা আপডেট করা হয়েছে এবং ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে । এই আইন শুধু প্রতীকী নয়; এটি ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা দেয় । চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই আইন কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করে, কাদের সুরক্ষা দেয়, কোন কাজগুলো নিষিদ্ধ এবং আইন ভাঙলে তার গুরুতর পরিণতি কী হতে পারে। UAE-এর বৈষম্য বিরোধী আইনটি কী?
মূলত, UAE-এর বৈষম্য ও ঘৃণা প্রতিরোধ আইন, যা আনুষ্ঠানিকভাবে Federal Law No. 34/2023 (পূর্ববর্তী Federal Decree Law No. 2 of 2015-এর আপডেট সংস্করণ) নামে পরিচিত, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সাধন করে । এর প্রধান লক্ষ্য হলো UAE-এর বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে সহনশীলতা, উদারতা এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য একটি শক্ত আইনি ভিত্তি তৈরি করা । এটাকে দেশের সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতির আইনি মেরুদণ্ড হিসেবে ভাবতে পারো । এই আইন দেশের প্রত্যেককে সেইসব কাজ থেকে সক্রিয়ভাবে রক্ষা করতে চায় যা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়, চরমপন্থাকে উস্কে দেয় বা অসহিষ্ণুতা বাড়ায়, যার ফলে সকল বাসিন্দা ও পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হয় । এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে এখানে বৈষম্য এবং ঘৃণার কোনো স্থান নেই। এই আইন কাদের সুরক্ষা দেয়? সুরক্ষিত শ্রেণিগুলোর সংজ্ঞা
তাহলে, ঠিক কারা এই আইনের সুরক্ষার আওতায় পড়েন? আইনটিতে বৈষম্যের সংজ্ঞা বেশ স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে: এটি এমন কোনো কাজ যা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষ বা গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য, সীমাবদ্ধতা, বর্জন বা অগ্রাধিকার তৈরি করে । ২০১৫ সালের মূল আইনে এই ভিত্তিগুলো ছিল ধর্ম, বিশ্বাস, মতবাদ, সম্প্রদায়, বর্ণ, জাতি, গায়ের রঙ বা জাতিগত উৎস । ২০২৩ সালের আপডেট হওয়া আইনটি এই মূল ভাবনা বজায় রেখেছে, যেখানে "ধর্ম, বিশ্বাস, আচার, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, জাতি, বর্ণ, জাতিগত উৎস, লিঙ্গ বা গোত্র" অন্তর্ভুক্ত । মজার ব্যাপার হলো, আইনের দুটি সংস্করণেই "ধর্ম" বলতে নির্দিষ্টভাবে আব্রাহামিক ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়েছে: ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইহুদিধর্ম । এর মানে হলো, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সুরক্ষা মূলত এই তিনটি ধর্মের অনুসারীদের জন্য স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে । এই আইনের অধীনে কোন কাজগুলো অবৈধ?
UAE-এর বৈষম্য বিরোধী আইন কোন কাজগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, সে বিষয়ে বেশ সুস্পষ্ট। এটা শুধু প্রকাশ্য বৈষম্যের ব্যাপার নয়; এর পরিধি আরও ব্যাপক । প্রথমত, সুরক্ষিত শ্রেণিগুলোর (যেমন ধর্ম, জাতি বা জাতিগত উৎস) ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য বা অগ্রাধিকার তৈরি করা অবৈধ । এরপর আসে "Hate Speech" বা বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য – এর মধ্যে পড়ে এমন কোনো বিবৃতি বা কাজ, তা মৌখিক, লিখিত, অনলাইন বা অন্য কোনো মাধ্যমেই হোক না কেন, যা সমস্যা, বিবাদ বা বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে । আইনটি ধর্মীয় অবমাননা, যাকে প্রায়শই ব্লাসফেমি (blasphemy) বলা হয়, কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে । এর মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিকর্তা, স্বীকৃত আব্রাহামিক ধর্মগুলো (ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, ইহুদিধর্ম), তাদের নবীগণ, পবিত্র গ্রন্থসমূহ বা উপাসনালয় যেমন মসজিদ, গির্জা বা সিনাগগের অপমান করা । এমনকি এই ধর্মগুলোর অনুসারীদের "কাফের" বলাও নিষিদ্ধ । এছাড়াও, ধর্মীয় অবমাননা বা বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য সম্বলিত উপকরণ তৈরি, প্রচার বা বিতরণ করা একটি অপরাধ । ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে দল গঠন, অর্থায়ন বা এমনকি শুধু যোগদান করাও বেআইনি, যেমনটা এই ধরনের উদ্দেশ্যে সভা করাও নিষিদ্ধ । ২০২৩ সালের আইনটি চরমপন্থা মোকাবিলার ওপরও জোর দিয়েছে, যেখানে চরমপন্থী ধারণার ওপর ভিত্তি করে জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারে এমন কাজগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে । সত্যি বলতে, বার্তাটা স্পষ্ট: বিভেদ প্রচার করা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, তা যে মাধ্যমেই হোক না কেন । আইন লঙ্ঘনের শাস্তি কী?
UAE-এর বৈষম্য বিরোধী আইন ভাঙলে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, এবং শাস্তিগুলোও সেটাই প্রতিফলিত করে । যদি কেউ বৈষম্যমূলক কাজ করে বা বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে, তবে তাকে গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। শাস্তির মধ্যে প্রায়শই কারাদণ্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে – বিভিন্ন সূত্রে ন্যূনতম এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে – এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা, যা AED ৫০০,০০০ থেকে AED ১,০০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে, যদিও কিছু সূত্রে বিভিন্ন অপরাধের জন্য AED ৫০,০০০ থেকে AED ২ মিলিয়ন পর্যন্ত জরিমানার উল্লেখ রয়েছে । এটা মনে রাখা দরকার যে শাস্তি বিভিন্ন হতে পারে, তাই সবচেয়ে হালনাগাদ তথ্যের জন্য একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ। যদি কোনো সরকারি কর্মচারী কর্তব্যরত অবস্থায় এমন কাজ করেন, তার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর বাইরে নয়; কোম্পানির প্রতিনিধি বা ম্যানেজার ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হতে পারেন যদি কোনো কর্মচারী কোম্পানির হয়ে এই আইনের অধীনে অপরাধ করে, বিশেষ করে যদি ম্যানেজার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকেন । বিদ্বেষ ছড়ানো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করলেও কারাদণ্ড হতে পারে, যা সম্ভবত সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে । তবে, শাস্তি কমানোর একটি পথ থাকতে পারে; কোনো অপরাধ প্রকাশ পাওয়ার আগেই নিজে থেকে জানালে শাস্তি কমানো বা মওকুফ করা হতে পারে । প্রেক্ষাপট: অন্যান্য বৈষম্য বিরোধী পদক্ষেপের সাথে সম্পর্ক
যদিও Federal Law No. 34/2023 (এবং এর পূর্ববর্তী আইন) ধর্ম, জাতি এবং বংশের ভিত্তিতে বৈষম্য মোকাবিলার মূল ভিত্তি, তবে UAE-তে সমতা প্রচারের জন্য এটিই একমাত্র আইন নয় । এটি একটি বৃহত্তর আইনি কাঠামোর অংশ। উদাহরণস্বরূপ, UAE শ্রম আইন (Federal Decree Law No. 33 of 2021) বিশেষভাবে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে কাজ করে, যেখানে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতীয় উৎস, সামাজিক উৎস বা অক্ষমতার ভিত্তিতে অন্যায্য আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । এছাড়াও, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের (People of Determination) অধিকার রক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে, যেমন Federal Law No. 29 of 2006 এবং Dubai Law No. 3 of 2022 । Cabinet Resolution No. 43 of 2018 এটিকে আরও শক্তিশালী করে, যেখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং নিয়োগকর্তাদের প্রতিবন্ধী কর্মচারীদের জন্য যুক্তিসঙ্গত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে । সুতরাং, দেখতেই পাচ্ছ, UAE-তে জীবনের এবং কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যায্যতার প্রতি অঙ্গীকার প্রসারিত। ব্যক্তিবিশেষের জন্য ব্যবহারিক নির্দেশিকা (বাসিন্দা ও প্রবাসী)
তুমি যদি UAE-তে থাকো বা ঘুরতে আসো, তাহলে সম্মানজনকভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য এই আইনটি বোঝা অত্যন্ত জরুরি। মূল কথা কী? ব্যক্তিগতভাবে এবং অনলাইনে, তোমার কথা ও কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকো । ধর্ম – বিশেষ করে ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইহুদিধর্ম – অথবা মানুষের জাতি, জাতীয়তা বা জাতিগত পটভূমি নিয়ে ঠাট্টা বা অপমানজনক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকো । অন্য কোথাও যা সাধারণ মন্তব্য বলে মনে হতে পারে, এখানে তা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে নেওয়া হতে পারে এবং এর ফলে গুরুতর আইনি সমস্যা হতে পারে । স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সম্মান করা অপরিহার্য । সত্যি বলতে, একটু সচেতনতা ইতিবাচক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে এবং আইনের সঠিক পথে থাকতে অনেক সাহায্য করে। ব্যবসা ও নিয়োগকর্তাদের জন্য প্রভাব
UAE-তে কর্মরত সংস্থাগুলোর জন্য, এই আইনের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত আচরণের বাইরেও অনেকখানি। কর্মক্ষেত্রে সম্মান ও আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা অপরিহার্য । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিশ্চিত করা উচিত যে তাদের বৈষম্য ও হয়রানি নিষিদ্ধ করার জন্য স্পষ্ট ও শক্তিশালী নীতিমালা রয়েছে, যা কেবল বৈষম্য বিরোধী আইনের ভিত্তিগুলো (ধর্ম, জাতি ইত্যাদি) নয়, শ্রম আইনে উল্লেখিত বিষয়গুলোও (লিঙ্গ, অক্ষমতা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করে । প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কর্মচারী এবং ম্যানেজার উভয়কেই গ্রহণযোগ্য আচরণ, আইনের খুঁটিনাটি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষিত করতে হবে । যেকোনো লঙ্ঘন জানানোর জন্য স্পষ্ট পদ্ধতি বাস্তবায়ন করাও অপরিহার্য । এবং মনে রেখো, ম্যানেজারদের তত্ত্বাবধানে কোনো অপরাধ ঘটলে এবং তাদের সচেতনতা প্রমাণিত হলে তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হতে পারেন, তাই সক্রিয় নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি ।